টিক টক। টিক টক। আমার শরীরের ঘড়ি তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে কেন?

আপনার প্রতি মাসের অতিথিকে আরো ভালভাবে বোঝার জন্য এই লেখাটি পড়ুন!

আমার নাম জামা, আমি এখন একটা মেয়ের কাছে সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কথা বলতে চলেছিঃ পি-রি-য়-ড। ঋতুস্রাব! এটা এমন একটা ব্যাপার যা সারা পৃথিবীর প্রত্যেকটি মেয়ের হয়ে থাকে, কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কথা বলতে গেলে খুবই লজ্জায় পড়ে যাই।

বোনেরা, এরকম করার সত্যিই কোন মানে নেই।

চলো, এবার কয়েকটি জিনিস নিয়ে কথা বলা যাক, যা নিয়ে মেয়েরা সবার সামনে কথা বলতে খুব ইতঃস্তত বোধ করে। এটা আমাদের শরীর, আর এই শরীর কিভাবে কাজ করে তা জানা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তোমার পিরিয়ড বা মাসিকের ক্ষেত্রে একমাত্র ভয়ের ব্যাপারটি হল, তোমার পিরিয়ড হলে কি হয় সেটা সম্পর্কে না জানা।

কঙ্গো থেকে মিরিয়েলা বলেছেঃ "আমার বয়স ইতিমধ্যে 15 হয়ে গিয়েছে! এবং আমার এখনও পিরিয়ড শুরু হয়নি। আমার সমস্ত বন্ধুরা এই নিয়ে আমার পিছনে লাগে, বলে যে, আমি এখনও বাচ্চা রয়ে গিয়েছি। আমি কি স্বাভাবিক?"

প্রথমে বলি, হ্যাঁ। তুমি স্বাভাবিক। তুমি ঠিক আছ! চিন্তা কোরো না।

মেয়েদের সাধারণতঃ বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর প্রায় 2 বছর পর ঋতুস্রাব শুরু হয়। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর চিহ্ন হল স্তনের বিকাশ, কিন্তু কখনও কখনও প্রথমে যৌনকেশ ওঠে। তোমার পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হওয়ার আগে বগলে লোম হওয়া বা 'নীচে' লোম ওঠা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার!

এছাড়া তুমি তোমার মাকেও জিজ্ঞাসা করতে পার যে, তাঁর প্রথম পিরিয়ড কত বছর বয়সে শুরু হয়েছিল, কারণ এরকম হতে পারে যে, তোমার এই দেরীর ব্যাপারটি বংশগত কারণে হচ্ছে। অন্যান্য কারণগুলিঃ যেসব মেয়ের খুব দৌড়ঝাঁপ করে বা খুব শীর্ণকায়, তাদের কখনও কখনো পিরিয়ড হতে দেরী হয়, এবং কিছু মেয়ের ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকার জন্য পিরিয়ডে দেরী হয়। প্রচন্ড মানসিক চাপ? সেটিও তা করতে পারে।

মরক্কো থেকে আবিয়া বলছেঃ "কিন্তু আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। যদি আমার কখনোই পিরিয়ড না হয় তাহলে কি হবে?"

মেয়েদের বয়স 16 হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের ঋতুস্রাব শুরু না হলে, সেক্ষেত্রে তাদের ঋতুস্রাব প্রবাহে কোন ঘাটতি থাকতে পারে। আমি তোমাকে এই ব্যাপারে তোমার মায়ের সাথে কথা বলতে বলব এবং এক্ষেত্রে ডাক্তার দেখিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে হবে এবং কোন সমস্যা আছে কি না তা নির্ণয় করতে হবে!

ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের সারা বলেছেঃ "আমার বয়স 22 এবং আমি লক্ষ্য করেছি যে, আমার পিরিয়ড নিয়মিত চক্রে হচ্ছে না। আমার এমনকি মাসে দুবারও তা হয়েছে এবং খুব বেশী স্রাব হয়েছে। আমাকে সাহায্য করুন!"

গড়ে, একজন মহিলার মাসে 3 থেকে 7 দিন এই পিরিয়ড বা মাসিক চলে থাকে। একটি পিরিয়ড চলাকালীন রক্তপাতের পরিমাণ বিভিন্ন হতে পারে। কিছু মহিলার বেশী স্রাব হয়ে থাকে। অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কিছু পরিচিত কারণ হলঃ

  • মানসিক চাপ। এটাই অনিয়মিত পিরিয়ডের সবচেয়ে পরিচিত কারণ! আপনার মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনগুলি সম্পর্কে জেনে নিনঃ কর্টিসল আপনার রক্তপ্রবাহে যদি খুব বেশী কর্টিসল থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার পিরিয়ড বা মাসিক চক্রের সময় বা প্রবাহে পরিবর্তন হতে পারে! মেয়েরা, নিজেকে ভালবাসো আর নিজের ভাল যত্ন নাও।
  • খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীর যেভাবে কাজ করে তার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রের উপর আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব রয়েছে এবং এর মধ্যে তোমার ঋতুস্রাবের চক্রও অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। তোমার যদি বেশী-ফ্যাট, বেশী চিনি, শাক-সবজি ছাড়া খাবার এড়িয়ে চলার আরেকটি কারণের প্রয়োজন হয়...সেক্ষেত্রে বলতে হয় যে, এটি তা হতে পারে।
  • ব্যায়াম। স্বাভাবিক ঋতুস্রাব হওয়ার জন্য, তোমার শরীরের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফ্যাট ও পুষ্টিপদার্থের প্রয়োজন হয়। কেউ যদি কোন খেলার জন্য কঠিন প্রশিক্ষণ নেয় (কঠিন বলতে সত্যিকারের কঠিন বলা হচ্ছে!), কখনও কখনও তার জন্য তোমার পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে উঠতে পারে।

এবং সবশেষে বলি, যদিও নিশ্চিতভাবে এখানেই তা শেষ নয়ঃ কোন উত্তর পাওয়ার জন্য কখনও ভয় পাবে না। যদি তুমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়, তোমার মাকে জিজ্ঞাসা কর। যদি অসুবিধা কোথায় হচ্ছে তিনি না জানেন, তোমার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা কর। যদি তিনিও না জানেন, আরেকজন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা কর। এটা তোমার শরীর, এটা তোমার জীবন এবং তুমিই তোমার পছন্দ বেছে নেবে।

Share your feedback