শুধুই মেয়েদের নিয়ে একটা ফুটবল দল তৈরি করেছি আমরা
শোনো Springsters!
আমার নাম নাওবি। আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেখানে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়ত। ছোটবেলায় আমি নিজের ভাইবোনদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে ভালবাসতাম। কিন্তু যখন আমি মাধ্যমিক স্কুলে উঠলাম, তখন দেখি যে স্পোর্টস ক্লাসের সময় ছেলেরা বাইরে বেরিয়ে যায় ফুটবল খেলার জন্য আর মেয়েদের ক্লাসেই থাকতে হয় আর পড়াশোনা করতে হয়। আমি যখন টিচারকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মেয়েরা কেন ফুটবল খেলতে যেতে পারবে না, তখন তিনি আমাকে বললেন যে, এই খেলা মেয়েদের জন্য নয়, ‘খুব হুজ্জতি হয়’, আর আমাদের নাকি খেলতে ভালও লাগবে না।
ভাবো একবার! মেয়েদের গায়েও জোর আছে, ছেলেরা যা পারে, আমরাও তা করে দেখাতে পারি। আমাদের কাজ শুধুই ঘরে থেকে শান্তশিষ্ট কাজ করে যাওয়া নয়। সক্রিয় এবং নতুন কিছু চেষ্টা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্কুল ছুটির পর আমি জনা দুয়েক মেয়েকে আমার মনের কথাটা জানালাম, তারপর দেখি তারাও আমার মতই ভাবে! আমরা বিশ্বাস করি, ছেলে আর মেয়েদের অধিকার সমান হওয়া উচিত। আমাদের শুধু এককাট্টা হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে, নিজের কথা বলতে হবে, একটা দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। দশজন মিলে এগিয়ে এলে শক্তি বাড়বে!
সব খেলোয়াড়দের জড়ো করো
আমাদের কথা যাতে সবার কানে পৌঁছয়, তার জন্য আমাদের একটা উপায় খোঁজার দরকার ছিল। তাই আমরা সবাই এক জায়গায় জড়ো হলাম নিজেদের মধ্যে মনকে উজ্জীবিত করার মত কথা বলার জন্য। আমরা সবাই নিশ্চিত হয়ে নিলাম যে, আমাদের সবার লক্ষ্যই এক। কোনও একটা সিদ্ধান্তকে বদলে ফেলতে হলে একজোট হয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। এরপর আমরা মাঠে নেমে একটা বন্ধুত্বমূলক ফুটবল ম্যাচ খেললাম। বেশ মজা হয়েছিল সেই খেলায়!
বল গড়িয়ে যেতে লাগল
পরদিন আমাদের কর্মকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ল, এটা আমাদের কাছে সুখবর ছিল। একেকটা সপ্তাহ পার হচ্ছিল আর আরও বেশি বেশি করে মেয়েরা স্কুল ছুটির পর খেলতে আসতে লাগল। লোকে বলে কথা না-বলে কাজ করে দেখিয়ে দেওয়া উচিত। আমরাও আমাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই বার্তা ছড়িয়ে দিলাম যে, মেয়েরাও খেলাধুলো করতে পারে। আর লোকেরাও নিজের চোখেই সেসব দেখতে পাচ্ছিল।
নিজের লক্ষ্য পূরণ করে যাও
আমরা আওয়াজ তুলেছিলাম। আমরা কাজেকর্মে নিজেদের আগ্রহকে প্রকাশ করেছিলাম। এবার আমাদের আবেদন রাখার সময়। আমরা প্রিন্সিপ্যালের কাছে একটা চিঠি পাঠাব বলে ঠিক করলাম। সেই চিঠিতে আমরা লিখব যে, ফুটবল ও খেলাধুলো কেন মেয়েদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমি আরও দু’জন মেয়ের সঙ্গে প্রিন্সিপ্যালের কাছে গিয়ে সেই চিঠি দিলাম আর তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, স্কুল ছুটির পর যে দল নিয়ে আমরা নিয়ে খেলি সেই দলটাকে স্কুলের দল বলে ঘোষণা করতে পারি কি না। আসলে আমরা চাইছিলাম ছেলেরা যেভাবে ভাল কোচের কাছে ফুটবল শিখছে, সেই রকম আমরাও যাতে ভাল একজন কোচ পাই। ভাবো তো কী হল? তিনি হ্যাঁ বললেন! তিনি আমাদের প্যাশনটা বুঝতে পেরেছিলেন আর আমাদের ধারাবাহিকতা সম্পর্কেও অবগত ছিলেন, এসবেই তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
আমরা আমাদের স্কুলের হয়ে খেলে প্রচুর প্রতিযোগিতা জিতেছি। আমরা নিজেরাই এটা দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরা মেয়েরা একজোট হয়ে কোনও কাজ করলে নিজের মনের কথা বলতে পারলে সেইসব সিদ্ধান্তকে ও নিয়মকে বদলে ফেলতে পারি, যেগুলো আমাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
Share your feedback