কিন্তু আমি যা তা-ই হতে চাই!
আমার বাবা-মা সবসময় কোনও একটা ব্যাপারে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকে। যেমন আমি পুরনো টি-শার্ট আর আরামদায়ক ট্রাউজার পরতে ভালবাসি, কিন্তু আমার মা বলে যে, মেয়েদের লম্বা স্কার্ট আর জামাকাপড় পরা উচিত। তিনি এ-ও বলেন যে, আমি খুব ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমার মনে হয়, আমি হয়তো কোনও মজা-আনন্দ করতে পারব না।
বাবাও খুব কড়াকড়ি করে আমার ওপর। আমি কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতে ভালবাসি আর কোড লিখতেও ভালবাসি, কিন্তু আমার কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে কাজ করাটা তিনি একদমই পছন্দ করেন না। এ বছর তিনি আমাকে এই বিষয়টা নিয়ে পড়তে বারণ করে দিয়েছেন।
আমার ভাই নিজের ইচ্ছেমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারে, জামাকাপড় পরতে পারে আর যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে বলে মনে হয়। এসব দেখে আমার ভীষণ রাগ হয়ে যায়।
ইদানীং আবার আমার মা আমার বন্ধুবান্ধবীদেরও সমালোচনা করতে শুরু করেছে। তিনি বলেন যে, আমার বন্ধুবান্ধবীদের মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি বেশি নেই বলে তাঁর মনে হয়।
আমি আমার বন্ধুবান্ধবীদের ভালবাসি, ওরা সবসময় আমার ভাল লাগা আর স্বপ্নকে সমর্থন করে। মায়ের মনে হয় যে, বন্ধুবান্ধবীদের নিয়ে থাকলে মন উতলা হয়ে যায় আর বাবা বলেন যে, আমার সমবয়সী ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত নয়, এতে করে লোকে যা তা ধারণা করবে। আমার তো মনে হয়, এসব বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমার বাবা-মা এত যে কড়া তা শুনে আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।
এই শনিবার আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অ্যাবিলার জন্মদিন, আমার বাবা-মা বলে দিয়েছেন বন্ধুর জন্মদিনে আমাকে যেতে দেবেন না। কেন যেতে দেবেন না, তার কোনও কারণ তাঁরা বলেননি।
বাবা-মাকে আমি শ্রদ্ধা করি আর আমি জানি তাঁরা আমায় চোখে চোখে রাখতে চান, কিন্তু আমি চাই আমার জীবনযাপনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব সিদ্ধান্তকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। আমার মনে হয় আমি নিজের বিশ্বস্ততার প্রমাণ রাখতে পেরেছি। তাই আমি আশা করি, তাঁরা আমার সঙ্গে খোলাখুলি সব আলোচনা করুন।
আমি নিজেকে শান্ত করার জন্য কিছুটা সময় নিলাম আর ঠিক করলাম, আমার রাগ পড়ে যাওয়ার পরই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলব। নিজেকে প্রস্তুত করার পর, আমি ঠান্ডা মাথায় তাঁদের বললাম যে, আমি যে-ধরনের নারী হয়ে উঠছি, তার জন্য আমি গর্বিত। আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করি আর বন্ধুত্বেরও একটা মূল্য রয়েছে আমার কাছে— এ ব্যাপারে আমি চাই তাঁরা আমার পাশে থাকুন।
তাঁরাও যাতে নিজের মত দিতে পারেন, তার জন্য তাঁদের সময় আর পরিসর দিলাম। তাঁরা আমার কথাগুলোকে সম্মান দিলেন। কথাবার্তা হওয়ার পর বাবা-মা দু’জনেই আমার প্রশংসা করে বললেন যে, সত্যিই আমি কত পরিণতমনস্ক হয়ে উঠেছি। আমার সিদ্ধান্তে আমার পাশে থাকবেন বলে তাঁরা দু’জনেই রাজি হলেন। মা তো এই কথাও দিলেন, তিনি আর আমার কাপড়চোপড় নিয়ে কোনও কথা শোনাবেন না!
Share your feedback