কেনার আর টাকাও নেই
মেয়েরা, সবাই শোনো,
আমার নাম নাওবি, গত সপ্তাহটা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে গেছে! ফাইনাল পরীক্ষার পড়ার চাপ ছিল খুব। খুব চিন্তা ছিল মাথার মধ্যে, আমি ফেল হতে চাই নি, নাহলে তো পরের ক্লাসে উঠতেই পারব না।
শুক্রবার সকালে বেশ খোশমেজাজেই ঘুম ভাঙল, শেষ আরও দু’টো পরীক্ষা আছে, প্রস্তুতি ভালই। ঘুম থেকে উঠেই দাঁত মাজলাম, মুখ ধুলাম আর স্নান করে নিলাম। স্নান করতে করতে বুঝতে পারলাম আমার মাসিক শুরু হয়ে গেছে!
আমি আমার ব্যাগ খুঁজে দেখি আমার স্যানিটারি ন্যাপকিন শেষ হয়ে গেছে। যে-বাক্সতে আমি টাকা জমিয়ে রাখি, সেটাতে দেখি স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার মতো পয়সা নেই। তাই আমি একটা পরিষ্কার কাপড় জড়িয়ে নিয়ে তার ওপর দু’টো অন্তর্বাস পরে নিলাম। এই ভাবেই গেলাম স্কুলে।
প্রথম পরীক্ষা বেশ ভালই হল। কিন্তু বিকেলের দিকে আমার ঋতুস্রাব প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেল, ঋতুরক্ত আর ধরে রাখতে পারছে না কাপড়টা। তাই সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাল্টানোর দরকার হল!
বন্ধুর কাছে সাহায্য চাইতেও ভয় করছিল, কেননা আমাকে শেখানো হয়েছে যে মাসিকের কথা চেপে রাখতে হয়। ভাবলাম, লোকে হয়তো আমাকে ভাল চোখে দেখবে না, কারণ আমার মাসিক হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা কি জানো তোমরা? মা আমাকে সবসময় বলতেন, “ভয় মানে হল ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা, যে-ঘটনাটা এখনও পর্যন্ত ঘটেইনি।” তাই আমি যদি নেতিবাচক পরিণতির কথা ভাবি, তাহলে ইতিবাচক পরিণতির কথাও ভাবতে পারি।
আমার মাসিক হচ্ছে বলে লোকে কী ভাববে বলে চিন্তা না-করে আমি নিজেকেই এটা বলতে লাগলাম যে, মাসিক হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার আর সত্যিকারের বন্ধুরা আমাকে এ ব্যাপারে সানন্দে সাহায্য করবে। বেশির চেয়ে বেশি কী হবে, কেউ হয়তো বলবে যে, সাহায্য করব না। ঠিক আছে, আরেকজনের কাছে যাব সাহায্য চাইতে। এটা এমন কিছু ব্যাপার নয়! এই কথাগুলো আমি মনে মনে নিজেকে পাঁচবার বললাম। তারপর মনে মনে গুনতে লাগলাম ৫, ৪, ৩, ২, ১। এরপর যখন ০ গোনা হয়ে গেল, তখন এগিয়ে গেলাম একজনের কাছে। আমি আমার বন্ধু আসিয়ার কাছে গিয়ে তার কাছ থেকে একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন চাইলাম।
আমি মনে কোনও ভয় ভাব নিয়ে যাইনি বলে খুব সহজেই আসিয়ার কাছ থেকে ন্যাপকিন চাইতে পেরেছিলাম আর সে-ও আমাকে তিনটে ন্যাপকিন দিয়েছিল যাতে আমার আরও কয়েকটা দিনও কেটে যায়। সে এ-ও বলেছিল যে, কারও কাছে ন্যাপকিন চাওয়াটা মোটেও লজ্জার বিষয় নয়। তোমার মাসিক হলে সেটা নিয়ে লুকোছাপা করার দরকার নেই। বেড়ে ওঠার একটা স্বাভাবিক অঙ্গ হল মাসিক। ঠিক যেমন লম্বা হওয়া বা চুল বাড়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
আসিয়া এইসঙ্গে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল যে কিছু টাকা সরিয়ে রাখতে যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং কোনো বন্ধুর জন্য অতিরিক্ত একটা কাছে রাখতে আমার কাছে যেন সর্বদা যথেষ্ট অর্থ থাকে তা নিশ্চিত করতে।
কাপড় পালটে ন্যাপকিন পরে এসে আমি সানন্দে ও স্বচ্ছন্দে শেষ পরীক্ষা দিতে বসে পড়লাম। আমার ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে যে আমি ভয় ভাবকে কাছেও ঘেঁষতে দিইনি। পরে যদি আবার কখনও এরকম দরকারে পড়ি, তাহলে আমি এটা কখনই ভাবব না যে লোকে কী ভাববে। নির্ভয়ে এগিয়ে গিয়ে আমি সোজাসুজি সাহায্য চেয়ে নেব।
Share your feedback