সেনেগালের এই মেয়েদের দেখুন, যাঁরা সব নিয়ম ভেঙে এগিয়ে গেছেন!
আমি ছোট থাকতেই আমার বাবা-মা দু’জনেই মারা যান, তাই আমাকে বড় করেছেন আমারই পাড়ার মহিলারা। তাঁরা সবাই আমাকে খুব ভালবাসতেন, সবার বাড়িতেই ছিল আমার অবাধ যাতায়াত, কিন্তু কারও বাড়িকেই নিজের বলে মনে করতে পারতাম না। এরপর আমি কুস্তি লড়তে শুরু করি এবং সেটা আমার জীবনই বদলে দিল। শেষ পর্যন্ত আমি এমন একটা কিছু খুঁজে পেলাম, যেটাকে আমি নিজের বলতে পারি।
বেশ কয়েক বছর আগে আমা্দের গ্রামের একজন অসাধারণ মহিলা সেনেগালে কুস্তি লড়তে শুরু করলেন, সেই সময় কুস্তিকে কেউ-ই “মেয়েদের খেলা” বলে ভাবতেন না। সামবাউ সমস্ত প্রচলিত ধ্যানধারনাকে নস্যাৎ করে দিলেন। তিনি সমস্ত নিয়ম ভেঙে দিলেন। যে সময় লোকে ভাবত যে কুস্তিটা হল ছেলেদের খেলা, সেই সময় সামবাউ কুস্তির রিংয়ে গিয়ে একেকজন কুস্তিগিরকে কুপোকাত করে দিচ্ছিলেন। তিনি এমনকী অলিম্পিকেও খেলতে গিয়েছিলেন! কী অভূতপূর্ব ব্যাপার ভাবুন তো... সেনেগালের ছোট্ট একটা গ্রামের মেয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দিয়ে পৌঁছলেন। কোনও কিছু নিয়ে একমনে লেগে পড়তে পারলে যে কোনও কাজই করা সম্ভব, তাই নয় কি?
ইসাবেল সামবাউ সেনেগাল থেকে ফিরে এসে এখানকার ছোট ছোট মেয়েদের জন্য কুস্তির শেখানোর ক্লাব খুললেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর পরে যে মেয়েরা কুস্তি শিখতে আসবে, তারাও একদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে। এইভাবেই আমিও কুস্তি খেলাটার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। আমিও সেই ক্লাবে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভর্তি হয়ে গেলাম, কেননা আমারও স্বপ্ন যে একদিন আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হব। এর জন্য ধন্যবাদ জানাই সামবাউকে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ছাড়াও আমি কুস্তি ভালবাসি কারণ কুস্তি খেললে নিজেকে মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী মনে হয় আর আমারও জীবনের কিছু উদ্দেশ্য আছে বলে অনুভব করতে পারি। কী ভাবে আত্মবিশ্বাসী হতে হয়, কী ভাবে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়, সেটা শিখতে হবে, না হলে তোমার প্রতিপক্ষ বুঝে যাবে যে তুমি ভয় পাচ্ছ আর এভাবেই তুমি হয়তো খেলায় হেরে যাবে।
সামবাউ রাতারাতি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাননি। তিনি প্রথমে পাড়াতেই কুস্তি খেলে নিজেকে তৈরি করেছিলেন। আমিও সেটাই করছি। বড় স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে ভয়ে পেলে চলবে না, কারণ এতে করে আমার কোনও লাভ হবে না, তাই আমি যতটা পারি কঠোর পরিশ্রম করে প্রশিক্ষণ নিয়ে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রত্যেক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি একবার চোখ দু’টো বুজে নিয়ে স্বপ্ন দেখি যে আমি সব খেলায় জিতছি আর সবশেষে সোনার মেডেল আমার গলাতেই পরানো হচ্ছে। অজস্র বার স্বপ্নে নিজেকে জিততে দেখেতে দেখতে এখন আর জেতাটা অসম্ভব বলে মনে হয় না।
ইসাবেল সামবাউ আমাদের গ্রামকে এতটাই গৌরবান্বিত করেছেন যে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা তাঁকেই গ্রামপ্রধানের পদে বসিয়েছেন, আর এভাবে তিনি আমাদের গ্রামের প্রথম মহিলা গ্রামপ্রধান হওয়ার গৌরব অর্জন করে নিয়েছেন। এখন জানতে পেরেছি যে জীবনে আমি বক্সার হতে চাই, তাই আমি যেরকম সুযোগই পাই না কেন, বক্সার হওয়ার পথেই এগিয়ে যাব। আমি নিজের স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য পরিশ্রম করেই যাব, কারণ আমি জানি যে মেয়েরা রিংয়ে নামলেই বিশাল কিছু ঘটবেই ঘটবে!
Share your feedback