মেয়েরা যখন কথা বলে...

আশ্চর্য সব ব্যাপার ঘটতে থাকে!

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর আমার সবচেয়ে ভাল লাগে যে-কাজটা করতে সেটা হল এই যে, রেডিয়োতে গার্ল পাওয়ার আওয়ার অনুষ্ঠানটা শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা। এই অনুষ্ঠানটার বিশেষত্ব হল এই যে, এর সঞ্চালক এমন সব বিশেষ বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যেসব আমার-আপনার মত কিশোরী-তরুণীদের খুব কাজে লাগে।

গত সপ্তাহে রেডিয়োর সঞ্চালক শারীরিক রূপ নিয়ে কথা বলছিলেন। তাঁদের মতে, কমবয়েসি মেয়েদের মধ্যে শারীরিক রূপ নিয়ে প্রচণ্ড রকমের অনিশ্চয়তার ভাব রয়েছে। স্থানীয় এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতি 3 জনের মধ্যে 1 জন মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের চেহারা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। কেউ কেউ ভাবে যে, তারা ঠিক সুন্দর নয়, অনেকেই আবার ভাবে যে তাদের শরীর ছিপছিপে নয়। এমনটা যে হয়, তার কারণ হল এই যে, বয়ঃসন্ধি আসার সঙ্গে সঙ্গে বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখা দেয় সেগুলোর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে না।

এসব জানতে পেরে আমি বলতে গেলে আঁতকেই উঠেছি! আমার মা সবসময় বলতেন যে, আমি নিজের মত করে সুন্দর ও আকর্ষণীয়, কিন্তু আমার মনে হয় অন্যান্য মেয়েদের এমন সব কথা বলার জন্য কেউ নেই। আমি সত্যিই এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু করতে তাই, সেজন্য আমি স্কুল ছুটির পরে আমার কয়েকজন বন্ধুকে বাড়িতে ডেকেছি এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলার জন্য।

চারপাশে এমন সব মেয়েদের দেখা যাচ্ছে, যাদের চেহারা-রূপের সঙ্গে নিজের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ভেবে ভেবে কাতর হয়ে পড়ছে অল্পবয়েসি মেয়েরা। এই দিকটা নিয়ে আমরা কী ভাবি, আমাদের মতামত কী তা নিয়ে আমরা সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনা করলাম। আমরা যখন বয়ঃসন্ধিকাল পার করছিলাম, তখন আমাদের শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল, তা নিয়ে আলোচনা করে দেখলাম, আমাদের সবার গল্পই এক। যারা একসময় নিজেকে একা বলে মনে করেছিল, তারা আজ বুঝতে পারল যে, নিজের শরীরকে একই সঙ্গে ভালোবাসা আর ঘৃণা করার ব্যাপারে কেউ-ই একা নয়। সবাই কম বেশি এসব করেছেই। দেখো মেয়েরা, তোমরা আজ যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছ, সেই পথের পথিক তোমরা একা নও। তোমার শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে তা নিয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলোচনা করে নিলে নিজেকে মানসিক ভাবে অনেক শক্তিশালী মনে হবে।

আমরা এই বিষয়টা নিয়ে আগাপাশতলা আলোচনা করার পর ঠিক করলাম, এর সমাধান বের করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা কী ভাবে নিজের শরীরকে ভালোবাসবো তার স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা করলাম। সবশেষে আমরা এই প্রতিজ্ঞা করলাম যে, নিজেদের শরীরকে অন্যের শরীরের সঙ্গে তুলনা করা বন্ধ করব। আমরা সবাই বয়ঃসন্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি বলে আমাদের সবার নিজের নিজের মত করে আলাদা আলাদা ভাবে শারীরিক পরিবর্তনগুলো হয়ে চলেছে। এটাই স্বাভাবিক।

স্কুল ছুটির পর সেদিনকার সেই সামান্য আড্ডাটাই আজ মেয়েদের একটা ক্লাবের চেহারা নিয়েছে। এখানে আমরা বয়ঃসন্ধি নিয়ে এবং মেয়ে হিসাবে আমাদের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব আলোচনা করি! প্রথম দিন আমি 5জন মেয়েকে নিয়ে আড্ডাটা শুরু করেছিলাম। আজ এখানে আসে 50 জন!

মেয়েরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলে তখন আমরা একে অপরের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি এবং একে অপরকে অনেক কথা শেখাতেও পারি। এর চেয়ে শক্তিশালী ও আশ্চর্য আর কিছুই নেই।

Share your feedback