নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। নির্ভীক হও।
মাসিক মানেই হল ব্যথা, ব্রণ, মনের দোলাচল আর জড়তার ভাব তৈরি করা কিছু মুহূর্ত, কিন্তু আমি তোমাদের বলতে চাই যে মাসিক মানেই শুধু এগুলোই নয়।
তোমার যখন মাসিক হয় তখন লোকে হয়তো তোমাকে এই ধরনের কিছু কথা বলে থাকে— যেমন “সারাদিন শুয়ে থাকো’, ‘খেলাধুলো কোরো না’ বা ‘কাউকে বোলো না যে তোমার মাসিক শুরু হয়ে গেছে’। কিন্তু এসব কথায় কান দেওয়ার কোনও দরকার নেই, তোমার নিজের যদি কোনও কাজ করতে ইচ্ছে হয়, করে ফেলো। শোনো মেয়ে, কেউ যেন তোমাকে ঠেকিয়ে রাখতে না-পারে! আমার জীবনে যে কোনও ব্যাপারেই আমার মনোভাব এখন এমনই। এর জন্য ধন্যবাদ Springster কে।
গত মাসে আমাকে একটা বড়সড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। আমি আর আমার দল রোজ ট্রেনিং করতাম। রিলে রেসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুরো সম্ভাবনা ছিল আমাদের। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতার ঠিক আগের দিন অপ্রত্যাশিত ভাবে ট্রেনিংয়ের মাঝেই আমার মাসিক শুরু হয়ে গেল।
ভাগ্য ভালো আমায় কোনও চাপে পড়তে হয়নি। কিন্তু প্র্যাকটিস মাঝপথে ছেড়ে আমাকে চলে আসতে হয়েছিল, যাতে পরদিন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারি। আমার মাসিক শুরু হওয়ার কথাটা শুধু আমার মা জানত আর এই কথাটা আমার কোচকে বলতে দ্বিধা হচ্ছিল, কেননা তিনি একজন পুরুষ মানুষ। কিন্তু গ্লোরিয়া যখন আমাদের জানাল যে কোচের নিজেরই একটি মেয়ে আছে, যে কিনা ছোট্টটি নয়। এ কথা জানার পর আমরা খুব হাসাহাসি করলাম সামান্য একটা ছুতো বের করার চেষ্টা করছিলাম বলে। কোচের মেয়েরও যা বয়স সেই বয়সে মাসিক হওয়ারই কথা, তাই তাঁকে এ ব্যাপারে জানানোটা কোনও লজ্জার ব্যাপার নয়। গ্লোরিয়া ঠিকই বলেছিল। পুরুষ মানুষের হয়তো মাসিক হয় না, কিন্তু তাঁদেরও মা-বোন-স্ত্রী রয়েছেন, তাঁদের তো মাসিক হয়, তাই পুরুষ মানুষও মাসিকের ব্যাপারটা নিশ্চয়ই বোঝেন।
তবুও একটু লজ্জা আর একটু ভয় ভাব নিয়ে কোচের কাছে গেলাম আর তাঁকে বললাম যে, আমার মাসিক শুরু হয়েছে। তিনি এ কথা শুনে শুধু বললেন যে, কোনও ব্যাপার না, তিনি এরপর আমার মা-কে ফোন করে ডেকে পাঠালেন আমাকে এসে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বাঃ দারুণ! কথা বলে তো সব সমস্যাই মিটে গেল!
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই নিজেকে চ্যাম্পিয়ন মনে হচ্ছিল। এই মনোভাব নিয়ে আমি মাঠে নেমে পড়লাম আর রেস জিতে গেলাম! আমি ফিনিশ লাইন পার করতেই সাংবাদিক ছুটে এলেন আমার দিকে আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য।
তিনি বললেন, “অভিনন্দন কোয়াসি! কেমন লাগছে আপনার?”
আমি বললাম, “অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে আমার! গতকাল আমার মাসিক শুরু হতেই আমি একটু মনমরা হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু আমি ঠিক করলাম এই মাসিককে আমি পাত্তাই দেব না। আমি শুধু নিজের লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছিলাম আর তার যা ফল পেলাম, তার জন্য নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।”
কোচকে খোলাখুলি নিজের মাসিকের কথা বলার পর আমার মনে হয়েছিল যে এটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। কিছু লোক এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে আমি জাতীয় পর্যায়ের টিভি চ্যানেলে নিজের মাসিকের কথা বলে দিয়েছি। ভাবলে ভাবুক, বয়েই গেল! মাসিক তো একটা স্বাভাবিক ব্যাপার, এটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কী আছে। আমি খুব খুশি যে আমার দল জিতেছে!
Share your feedback