আমি কি স্বাভাবিক?

সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে কেন?

স্কুলে ইদানীং আমার খুব বাজে সময় যাচ্ছে। আমাকে দেখতে অন্য মেয়েদের মতো নয় বলে ওরা আমার মনে আঘাত লাগার মতো কথা বলে। আমার বয়স প্রায় ১৪ বছর কিন্তু ওরা বারে বারে বলতে থাকে যে, আমাকে দেখতে দশ বছর বয়সের মেয়ের মতো!

আমি তখন নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি স্বাভাবিক তো? শুধু আমাকেই কেন অন্য রকম দেখতে? আমার বুক উঁচু হয়ে ওঠেনি বলে আর আমার কোনও ব্রণ নেই বলেই কি সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে!...এই তামাশা এতটাই বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করলো যে আমি আর স্কুলেই যেতে চাইতাম না

একদিন আমি অসুস্থ হওয়ার ভান করলাম। বাড়িতে থেকে সারাদিন অনলাইনে Springster-এর কাহিনীগুলো পড়ছিলাম। আমি জানতে পারলাম যে, বয়ঃসন্ধি এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক একটা শরীর শারীরিকভাবে প্রাপ্তবয়স্ক শরীরে পরিণত হয় আর যৌন প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে। এই পর্যায়ে মেয়েদের শরীরে নানা জায়গায় বাঁক ফুটে ওঠে, তাদের নিতম্বের অস্থি চওড়া হয়ে যায় এই সময় তাদের মাসিক শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন লোকের বয়ঃসন্ধি বিভিন্ন বয়সে হয়। সাধারণত মেয়েদের বয়ঃসন্ধির কাল শুরু হয় ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে। কিন্তু সব মেয়ের ক্ষেত্রে এরকম হয় না। কোনও কোনও মেয়ের বয়ঃসন্ধি তার আগে বা পরেও শুরু হতে পারে। এটা জানতে পেরে আমি খুবই স্বস্তি পেলাম যে আমি পুরোপুরি সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ।

নিজের শরীর সম্পর্কে অনেক অনেক নতুন নতুন কথা শিখলাম। আমি জানতে পারলাম যে, আমি যা আমাকে তা নিয়েই খুশি থাকার দরকার, আর নিজের শারীরিক প্রক্রিয়ার ওপরও আস্থা রাখা উচিত। বেড়ে ওঠাটা একটা যাত্রার মতো, আর প্রত্যেকের যাত্রা আলাদা আালাদা হয়। তাই নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না-করে নিজে যা তা-ই নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তোমার শরীরই যদি না-থাকে তাহলে তুমি নিঃশ্বাস নিতে পারবে না, হাঁটাচলা করতে পারবে না আর খাওয়াদাওয়াও করতে পারবে না। তাই নিজের শরীর যেমনই হোক না কেন তাকে মেনে নিয়ে আনন্দে থাকা উচিত। কী ভাবে আমার শরীরের বিকাশ হয় সে-কথা পড়াতে আমি আসল কথাগুলো জানতে পারলাম আর এখন আমার দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে গেছে।

তাই আমার শরীর যেমন সেটাকেই আমি ভালবাসি আর তা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কথা বলি। এসব জানার পর পরেরদিন স্কুলে যাওয়ার মতো মনোবল ফিরে পেলাম আমি। আবার অন্যান্য মেয়েরা আমাকে খ্যাপাতে লাগল, আমি তখন রুখে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের বললাম, “আমার মাসিক শুরু হয়নি, আমার বুক উঁচু হয়নি বা আমার ওজন বা উচ্চতা কম, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি স্বাভাবিক নই। আমি আমার শরীরকে ভালবাসি আর এটা ঠিক সময়মতো স্বাভাবিকভাবে বদলাক সেটাই আমি চাই, এতেই আমি খুশি।”

আমি বুঝতে পারলাম যে ওদের নেতিবাচক কথাগুলো শুনে মন খারাপ করার দরকার নেই— ওরা যে আমাকে খ্যাপায় সেটা ওদের সমস্যা, আমার নয়। আমি তাদের মুখের ওপর জবাব দেওয়ার পর ওরা আমাকে খ্যাপানো বন্ধ করে দিল আর জানতে পারল যে আমি বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে অনেক কথা জানি। ওরা জানতে চাইল যে আমি কোত্থেকে এসব কথা জেনেছি। আমি বললাম, “Springster থেকে!”

Share your feedback