আমার কিন্তু কিছু মনে হয় না
আমার ভ্রুদুটি সবসময়ই খুব মোটা এবং যখন ছোটো ছিলাম কোন সময়ই তা আমার বিরক্তি উদ্রেক করতো না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমার আয়নায় মুখ দেখার সময় ভ্রুজোড়া দেখলেই ঘেন্না হতো!
ব্যাপারটা আসলে হল, আমি এখন 14 এবং যবে থেকে আমার ঋতুচক্র ও বয়ঃসন্ধি শুরু হয়েছে, তখন থেকে আমার শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন হয়েছে-যেগুলো নিয়ে আমি খুব একটা খুশি ছিলাম না। আমার ভালো লাগে যে এখন আমার ছোট স্তন এবং পিউবিক হেয়ার রয়েছে, কিন্তু আমার একেবারেই পচ্ছন্দ হয়নি মুখে জন্মানো লোম আর বড় চুল ভর্তি শুঁয়োপোকার মতো দু’খানা জোড়া ভ্রু(যেরকম আমায় স্কুলের বাচ্চারা বলে থাকে!)।
আমি অবাঞ্ছিত মুখের লোম এবং ভ্রুর চুল তুলে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, আর তাই মার কাছে পরামর্শ চাইলাম। মা খুব সমঝদার মানুষ তিনি আমায় বোঝালেন ব্যাখ্যা করে যে বয়ঃসন্ধির সময় শরীরে নানাবিধ শারিরীক ও আবেগজনিত পরিবর্তন ঘটে, ঘটনাগুলি জীবনচক্রে সময়ে সময়ে অনিবার্যভাবে হবেই আমরা সবাই এই পথেই যেতে বাধ্য। তিনি প্রাসঙ্গিক হিসাবে হরমোন এবং তার শরীরের উপর কাজগুলি বুঝিয়ে দিলেন –হরমোনগুলির বিশেষ শারিরীক রসায়ন ও তাদের বার্তা এবং শরীরে হরমোনের নিয়ন্ত্রণ করার কাজগুলি সম্পর্কে জানালেন আমাকে, যেমন আবেগ আর ক্ষুধাবোধ। যখন বালিকারা বয়ঃসন্ধির মধ্যে দিয়ে সময় যাপন করে তখন তাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে, আর বালকদের শরীরের এই হরমোনকে টেস্টোরেন হরমোন বলে।
মা আমাকে আরো বললেন যে আমরা সবাই পৃথক পৃথকভাবে হরমোনের প্রভাবের সাড়া শরীরের মধ্য দিয়ে দিয়ে থাকি- আমাদের মধ্যে অনেকের ব্রনো, তৈলাক্ত চুল, মানসিকভাবের দোদুল্যমানতার অভিজ্ঞতা যেমন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা বিষন্নতাবোধে আক্রান্ত হওয়া, বা মুখে লোম জন্মানো (যেমন আমার)ইত্যাদি প্রকারে। নাটকীয়ভাবে শরীর যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই মুহূর্তে কিছু করে ফেললে পরবর্তীকালে অনুতাপ করতে হতে পারে একথাও তিনি আমাকে বললেন।
আমার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে বিরক্ত করায় আমি কিরকম নিরাপত্তার অভাব বোধ করি সে বিষয়েও আমাদের আলোচনা হল। আমাকে মা বললেন আয়নার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলতে, “আমি বাইরে এবং অন্তরে ঠিক এভাবেই সুন্দর”। আমি এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেক সুফল পাই। স্কুলে যাওয়ার সময় রোজ আমি এখন এই মন্ত্র উচ্চারণ করে যাই আর সত্যিকারে তা আমায় জোর দেয় ভাবাতে আমি সুন্দর ঠিক যেভাবে আমি আছি-আমার মোটা ভ্রুযুগল উজ্জ্বল ঝকঝকে। কারণ আমাকে অনন্য করে তুলতে তারা একটি সুন্দর ভূমিকা নিয়েছে!
আমি নিজেকে নিয়ে নিজে আনন্দে আত্মহারা হয়ে থাকি এখন আর কেউ আমায় জ্বালাতন করলে আমি হেসে উত্তর দিই্, “ধন্যবাদ আমাকে অসাধারণ এবং সুন্দররূপে লক্ষ্য করার জন্য!”
Share your feedback