দুর্বলতার মধ্যেও রয়েছে শক্তি

সেটাকে অর্জন করতেই হবে

আত্মবিশ্বাস মানে এই নয় যে তোমার কোনও দুর্বলতা বা অসুরক্ষিত মনোভাব নেই। আত্মবিশ্বাস মানে হল, নিজের অসুরক্ষিত মনোভাবগুলোকে খোলাখুলি মেনে নেওয়া আর এগুলোকে নিজের লক্ষ্যপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না দেওয়া আর সর্বোৎকৃষ্ট একটা জীবন যাপন করা।

মানুষ সাধারণত অতিসরলীকরণের পথে গিয়ে এমন সব মন্তব্য করে বসে, “আবেগপ্রবণ হওয়াটা দুর্বলতা” বা “দুর্বল লোকেরা কখনও সফল হতে পারে না”। কিন্তু এসব মোটেও সত্যি নয়।

এখানে বলা হল, কী ভাবে নিজের দুর্বলতাকে জয় করে নিজেকে অধিক শক্তিশালী আর অধিক আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারবে।

নিজের দুর্বলতাকে মেনে নাও

যখনই আমাদের দুর্বলতা ধরা পড়ে যায় তখন আমরা অনেকেই সেটাকে ঢাকার চেষ্টা করি। আমরা এটা ভেবে অভ্যস্ত যে, আমাদের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করে ফেললে কেউ আমাদের সম্মান করবে না। কিন্তু আমরা বিষয়টাকে প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবি না।

আসল কথা হল, যখনই আমরা নিজেদের দুর্বলতাকে মেনে নিই, তখনই আমরা নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে পারি, কেননা আমরা নিজেদের দুর্বলতাকে স্বীকার করে নিয়েছি। কেউ তখন এটাকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে না... যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরাই সেই সুযোগটা অন্যকে দিয়ে দিই।

নিজের দুর্বলতাকে মেনে নিলে সেই দুর্বলতার পরিণতিকে তোমরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তার ফলে তোমরা জীবনে নিজেকে আরও বেশি সুরক্ষিত ও আত্মবিশ্বাসী মনে করতে পারবে।

নিজের দুর্বলতার কথা বলো

মানুষ তোমার কর্মকাণ্ড দেখে অনুপ্রাণিত হয়, কিন্তু তোমার সংস্পর্শে তারা আসতে পারে তোমার মনের মধ্যে থাকা দুর্বলতাগুলোর মাধ্যমে। যখন তুমি নিজের মনের আবেগগুলো খুলে বলো, যখন তুমি নিজের মনের গভীর অনুভূতিগুলো কাউকে বলো, তুমি যে আসলে কী, সেটাকে তুলে ধরো, সেইগুলোই হল দুর্বলতা। এসব শোনার পরে মানুষ তোমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে, তারা তোমার সঙ্গে একাত্ম হতে পারে, কেননা তারা তখন নিজেদের সঙ্গে তোমাকে মিলিয়ে দেখতে শুরু করে। শুধু যে তুমিই কোনও গভীর কোনও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার হয়েছ তা নাও। তুমি এই পথের একলা পথিক নও।

মানুষ যখন নিজেকে তোমার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে শুরু করে, তখন তুমি তাদের সঙ্গে এক গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারো। তখন তুমি তাদের কাছে বিশ্বস্ত ও খাঁটি মানুষ হিসাবে ধরা দাও। অন্য লোকের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি হলে তুমি আরও বেশি সুখী ও আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে পারবে, তাই তোমার মনে যে অনুভূতিগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে অন্যেক সঙ্গে আলোচনা করতে দ্বিধা কোরো না।

নিজের দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও কাজ করে যাও

সাহস মানে হল ভয় পেলেও কাজ করতে এগিয়ে যাওয়া। কাজ করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হবেই, কিন্তু সেগুলোর জন্য যদি আমরা কোনও কাজে এগোনো বন্ধ করে দিই তাহলে তা হবে দুর্বলতা। তুমি যত এগিয়ে যেতে থাকবে, ততই তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকবে। যেমন ধরো, একগাদা লোকের সামনে কথা বলতে তোমার ভয় করে, কিন্তু ভয় করলেও কথা বলার জন্য হাতটা তুলতে হবে। বা তোমার হয়তো জানা নেই কোনও কাজে 100 শতাংশ সফল হওয়ার জন্য কী কী করতে হবে, তা সত্ত্বেও সেই কাজটা করার জন্য এগিয়ে যেতে হবে, কেননা হয়তো কাজটা করতে করতেই কোনও সুযোগ চলে আসবে।

যখন তুমি নিজের দুর্বলতাকে খোলাখুলি মেনে নিতে পারবে তখন তুমি সেটাকে নিয়ে ভেবে সেগুলোকেই নিজের শক্তিতে রূপান্তরিত করার উপায় খুঁজে বের করতে পারবে। তাই চট করে এটা কখনওই ভেবে বোসো না যে, দুর্বল বা আবেগপ্রবণ হওয়া মানেই এক রকম ব্যর্থতা। যখন তুমি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেবে, নিজের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করতে পারবে, আর সেই দুর্বলতাকে কাটানোর চেষ্টা করবে, তখন তুমি নিজের শক্তি বাড়াতে পারবে আর এর ফলে তুমি নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে করতে পারবে।

Share your feedback