সবসময় যা চলে আসছে তার বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়াই
যখন ছোট ছিলাম তখন বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলে খুব ভাল লাগত আমার। তুতো ভাইবোনদের সঙ্গে আমি বাড়ির বাইরে মজার মজার খেলা খেলতাম, যেগুলো ছিল প্রতিযোগিতামূলক। আমার ভাই টনিকে নিয়ে আমার টিমটা খুব ভাল হত। কিন্তু যতই বড় হতে লাগলাম, ততই লক্ষ্য করলাম যে, আমি বাইরে খেলার সময় খুব বেশি পাই না, বরং আমার বেশির ভাগ সময়ই মায়ের সঙ্গে রান্নাঘরে কেটে যায়। অন্যদিকে টনি তখনও বাড়ির বাইরে গিয়ে খেলাধুলো করার স্বাধীনতা ভোগ করে যাচ্ছে। ওকে কেউ বলে না যে রান্নাঘরে এসে একটু হাত লাগিয়ে দিতে। এটা আমার কাছে খুবই অদ্ভুত মনে হত – তাই আমি এটা নিয়ে প্রশ্ন তুললাম। আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আমি কেন বাইরে গিয়ে খেলতে পারি না, কেন আমাকে বাড়িতেই থাকতে হয় বাসনকোসন মাজার জন্য। তখন তিনি শুধু এটাই বলেছিলেন, “এমনটাই চলে আসছে।”
হুমমম, আমি মনে মনে ভাবলাম, “তাই নাকি?” কেউ তো আমাকে জিজ্ঞাসা করে না যে আমি কেমন আছি, আমার কী চাই। সবাই চায় আমি শুধু মুখ বুজে নিয়মই মেনে চলি। শোনো Springsters: কোনও একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আর তোমাদের মনে হল যে, এতে তোমাদের স্বার্থকে অবজ্ঞা করা হয়েছে, তখন সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার পুরো অধিকার আছে তোমাদের। (অবশ্য এ-ও মাথায় রাখতে হবে যে, সেই প্রশ্নটা তোলা তোমার পক্ষে নিরাপদ হবে কি না!)
এমন পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়েছিল যে, টনি আর আমার প্রতি যে আলাদা আলাদা আচরণ করা হচ্ছে তা ঠিক নয়, তাই আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম। কোনও কিছু করার মত নতুন করে ভাবার কোনও উপায় মায়ের কাছে ছিল না, তাই সন্ধ্যাবেলা সবাই চলে যাওয়ার পর আমি নিজে টনির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে গেলাম। আমি তাকে খোলাখুলিই বললাম যে, ওর সঙ্গে দল বেঁধে খেলার দিনগুলো আমার খুব মনে পড়ে, সে যদি আমার কাজে কিছুক্ষণ সাহায্য করে দেয় তাহলে আমরা দু’জনে মিলে যে কোনও কাজই তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে পারব আর তারও যদি কোনও কাজ করার থাকে, সে কাজে আমিও তাকে সাহায্য করব।
পরের বার যখন বাড়িতে লোকজন এল, তখন আমার বাবা-মা এটা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, টনি আর আমি দু’জনে মিলে বাসন ধুচ্ছি। এবার যেন এটাই আমাদের বাড়ির নতুন রীতি হয়ে গেল। এমন কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম কোত্থাও নেই যে, সংসারের কাজ শুধু মেয়েদেরই করতে হবে। এখন আমি আর আমার ভাই যে কোনও কাজই একসঙ্গে করি আর আমাদের জুটিটা খুব ভাল হয়েছে। আমি যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুখ খুলতে পেরেছি, সেটা ভেবে আমার নিজের ওপর গর্ববোধ হয়।
সবাই যতটা স্বাধীনতা পায়, ততটা পাওয়ার অধিকার আমাদের মেয়েদেরও আছে। তাই কেউ যদি তোমাদের ধ্যান-ধারণায় আঘাত দিতে চায়: তাহলে একটু থামো, ভাবো, আত্মবিশ্বাসী হও। আর অন্যদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।
Share your feedback