বড় শহরে জীবনযাপন

আমি যেভাবে এই বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি

আমার নাম একতা আর আমার বয়স 15 বছর। ছোটবেলা থেকেই আমার জীবন কেটেছে ছোট্ট একটা গ্রামে, কিন্তু বাবা নতুন চাকরি পাওয়ার পর আমাদের শহরে চলে আসতে হল। একদিকে আমার দুঃখ যে ছোটবেলার বন্ধুদের ছেড়ে চলে আসতে হল, কিন্তু আবার মনে এই আনন্দও হচ্ছিল যে নতুন একটা রোমাঞ্চকর জীবনে প্রবেশ করতে চলেছি এবার।

অজানা জগতে পাড়ি

আমি নতুন স্কুলের গেটটা পার হয়ে স্কুলে ঢুকছি আর ভেতরে ভেতরে বিস্ময়ে একটু হতবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি আগে যে-স্কুলে পড়তাম, সেখানে আমাদের ক্লাসে ছিল মাত্র 10 জন ছাত্রছাত্রী, আর এখানে আমার ক্লাসে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা 50! আমাকে কেউ কোনও দিনও বলেনি যে, শহরের ছেলেমেয়েদের দেখতে অন্যরকম হয়, তাদের পোশাক-পরিচ্ছদও অন্যরকমের হয়। স্কুল ছুটির পরে দেখি সবাই এখানে চট করে জিন্স আর স্নিকার্স পরে নেয়, কিন্তু আমি করি পরে থাকি—হাওয়াই চটি আর লম্বা ঝুলওয়ালা স্কার্ট।

আত্মপরিচয়ের সংকট

আমার সহপাঠীরা সহজেই বুঝতে পেরেছিল যে আমি এখানকার নই। আমার কথা বলার ভঙ্গি অন্যরকম আর আমার পোশাক-পরিচ্ছদও অন্যরকম, আমাকে তাদের মত দেখতে নয় বলে তারা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করত। আমি যে তাদের মত হয়ে উঠব তা নিয়ে আামাকে বেশ মানসিক চাপে পড়তে হয়েছিল। কখনও কখনও এই পৃথিবীটা কত যে অচেনা হয়ে যায়! সবাই বলে, “তুমি তোমার মতই থাকো” কিন্তু এরই পাশাপাশি সবার মত হয়ে থাকার চেষ্টা করতে হয়। সবাই বলে, “নিজেকে প্রকাশ করো নিজের মনের কথা খুলে বলো”, কিন্তু এরই পাশাপাশি আবার এমনভাবে কথা বলতে হবে, যা সবার কাছে “গ্রহণযোগ্য” হতে হবে। সত্যিই বড় গোলমেলে ব্যাপার।

পরিত্রাতা হয়ে এলেন মা

আমার মা বুঝতে পারতেন যে, আমি নতুন শহরে এসে এখানকার জীবনযাপনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছি না, তাই তিনি একটা অনেক বড় মন্ত্র আমার কানে দিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, মানুষ সবসময়েই বলবে যে, আমাদের কী হতে হবে আর আমাদের দেখতে কেমন হওয়া উচিত, কিন্তু জীবনে আসলে এসবের কোনও গুরুত্ব নেই। আসল কথা হল নিজেকে সহৃদয় হতে হবে আর সেই সঙ্গে নিজের ওপর ও নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এটাই কী সবচেয়ে বড় সত্য নয়?

নিজের প্রতি সৎ থাকা

পরদিন আমি স্কুলে গেলাম মাথা উঁচু করে। আমি যেমন জামাকাপড় পরি তা-ই পরে গেলাম আর আমি যেভাবে কথা বলি সেভাবেই কথা বললাম। সবাই আমাকে দেখে হাসাহাসি করল আমিও তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম কেননা আমি জানি যে এই পৃথিবীতে আমারও নিজস্ব একটা মূল্য আছে। আমি বুদ্ধিমতী আর আমি মানসিক ভাবেও খুব শক্তিশালী, এসবের জোরেই আমি একদিন কিছু করে দেখাব!

নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোটা খুবই মুশকিল ঠিকই, কিন্তু তুমি নিজে যা তা নিয়ে কোনও দিন লজ্জায় ভুগতে যেয়ো না। নিজের প্রতি সৎ থাকো, কেননা এই পৃথিবীতে তোমার মত একমাত্র তুমিই আছ আর সেটা খুবই অনন্য!

Share your feedback